শিরোনামঃ
আব্দুল জলিল ২৩-০৪-২০২৪ ০৩:২৪ অপরাহ্ন |
ডেক্স নিউজঃ শামস ই ইলাহী অনু সরকার একজন গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী। ঢাকা মিউজিক কলেজে থেকে পাস করা এই গুণী সঙ্গীত পরিচালক অনেকটা নিভৃতচারী। যা জানেন , প্রকাশ করেন ঢের কম। প্রচন্ড আডডাবাজ এবং বন্ধু বৎসল এই মানুষটি সম্প্রতি আবারো সঙ্গীতের নানা দিক নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করেছেন। আর তাতে করে আশায় বুক বাধছে শুদ্ধ সঙ্গীতের ভক্তকূল। আজকের এই লেখাটি শিল্পীর টাইমলাইন থেকে নেয়া। অনু সরকারের এক লেখায় তার এক ভক্ত যা জানতে চেয়েছিলেন তার প্রেক্ষিতেই এই লেখা। সঙ্গীতবোদ্ধা পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরার প্রচেষ্টামাত্র।
একেকটা দিন মসৃন
ভোর হতে শুরু করে রাতের শয্যায়।
একেকটা দিন উঁচু-নিচু
কেউ ডাকে পিছু
চুপিসারে উঁকি দিয়ে কোনের দরজায়।।
কবীর সুমনের গানের কয়েকটি লাইন।এখান থেকেই শুরু করি।জীবন বা সময়ের ফেলে আসা প্রচুর সাদা পাতা টলটলায়মান পৃথিবীকে দেখায়।আবার যাকিছু সামনে আছে, তৃণছাওয়া শক্ত জমিনও দেখায়।অবশিষ্ট যা অলিখিত পাতা তা-ই যদি ভরে নেই আনন্দাক্ষরে,তাওতো কিছু হয়।এতদিনের পেরিয়ে আসা এবড়ো খেবড়ো পথের বাঁকে যদি কিছুর সন্ধান পাই লুফে কেন নেবনা।সে আপনার স্বার্থকতার আনন্দেই হোকনা কেন।এখানে সার্বজনীন স্বার্থ আছে যে। এই উঁচু-নিচু সময়ের মধ্য থেকেই যেন কাল কিছু উকি দিয়েছিল ;নিভৃতবাসের মধ্যেও যেটুকু কোনের দরজা খোলা রেখেছি সেখানে।
জলিল সাহেব,সাহিত্যের সহকারী অধ্যাপক উপরন্ত ভালো মানের সংগীত শিল্পী।আমার এক লেখার প্রেক্ষিতে, উনি অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছিলেন উপলব্ধি থেকে।উনি নিজেও উঁকি দিলেন যেন।
বেশ কিছুদিন আগে পড়েছিলাম,মৃত্যুর আগে great মোঃ রফি,--- একটু বিরতি নিয়ে বলি, বিচরণ অনেক সীমিত করে ফেলেছি এখন।কিছু কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা আর ওই গান বা অল্প কিছু সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ। এই সম্বলটুকু আছে তাও আবার নিজের চেয়ে অনেকের করা ভালো কিছুর প্রতি দারুন আগ্রহের সময়টুকু নিয়ে। সেজন্য আলোচনা ওদিকেই চলে যায় বলে ক্ষমা করবেন।মোঃ রফি সাহেবের কথা বলছিলাম।ভারতের যাঁরা সংগীতবোদ্ধা,তাকে বলে থাকেন "ইশ্বরের কন্ঠস্বর'। আমি রফি সাহেবকে নিয়ে আলোচনা করছিনা।তবু ঘটনাটা বলা দরকার।উনি তার মৃত্যুর আগে সুরকার নওশাদ সাহেবের সুরে করা শেষ গজল(উনি গজলে বিচরণ করেছেন তুলনামূলক কম) রেকর্ড করার পর নওশাদ সাহেবকে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে বলেছিলেন,'আজকাল আমাকে দিয়ে ওরা যত গান করাচ্ছে, সব গলা দিয়ে গাইতে হচ্ছে।বহুদিন পর আজ ভেতর থেকে গাইলাম।এবং উনি তাঁর বড় অংকের পারিশ্রমিকটাও গ্রহণ করেননি শত অনুরোধ সত্ত্বেও।নিজের গাইতে ভালো লেগেছে বলে।এ জন্যেই তিনি মোঃ রফি।
জলিল সাহেবের এক মন্তব্য নিয়ে আলোচনা করছিলাম।উনি বলছেন যে আজকাল ভেতর থেকে গান গাইবার কাউকে দেখা যায়না এমনকি উপজেলা খুঁজে রবীন্দ্র, নজরুল গাওয়ারও কাউকে পাওয়া যাচ্ছেনা। মোঃ রফির যে ঘটনা বল্লাম,আমি নিশ্চিত জলিল সাহেব সেখান থেকে এটা কোট করেননি।উনি ছোটকাল থেকেই প্রকৃতির ছায়াতলে বসে গান করছেন এবং পরবর্তীতে উনার সংগীত শিক্ষা তাকে যথেষ্ট সহায়তা করেছে।উনি বল্লেন,কন্ঠ দিয়ে নয় ভেতর থেকে গাইবার কথা।আমার নিজেরও এই তাড়না ছিল বহুদিন। সদুত্তর পাইনি কোথাও।ফলে আজ বলছি দাপিয়ে গাইবার সময়ের মধ্যেই হঠাৎ একদিন বাদ দিলাম গান। তারপর নিজের প্রচেইষ্টায় হোক আর যেভাবেই হোক যখন নাকি উপলব্ধির কাছে এলাম, সময় তখন অনেক পেরিয়ে গেছে আর আমি, ব্যবহারিক থেকে অনেক দুরে।যমুনায় মৃদু ঢেউ উঠলেও সেই 'ছলাৎছল ছলাৎ ছল,ঘাটের কাছে গল্প করে নদীর জল',সেরকমটাই কিছু। জলিল সাহেব আরো কিছু খুঁজলে পাবেন হয়ত, এখনও গলা দিয়েই গাইছেন তবে ভেতর থেকে গাইবার সক্ষমতা তাদের অনেকেরই আছে।শুনলে খুব ভালো লাগে,আর তার বা তাদের ভবিষ্যৎ কামনা করি একদম ভেতর থেকেই।তাকে চিনলাম কি না চিনলাম এসবের তোয়াক্কা না করেই।আমরা পারিনি আপনারা কেন পারবেন না।নিয়ত এই প্রত্যাশা থাকে বলেই,এদেরই কারো স্বেচ্ছা ভ্রান্তি দেখলে দারুণ রাগ হয়। আপনারা যা গাইছেন বা লিখছেন এটাতো সবার জন্যই।এ খানে উদাসীনতা থাকবে কেন।
গতকাল নানা কারণেই মনটা বড় খারাপ ছিলো।অস্থির এক সময় পার করছি সে কারণেই হয়ত। এরই মাঝে জলিল সাহেবের মন্তব্যটাও সম্ভবত আমাকে প্রভাবান্বিত করেছিল।একজনের কথা বলছি,আমার পরিচিত কেউ নয় সে।চমৎকার লেখনি আর গানের কন্ঠ তার। কোন প্রেক্ষিতে হয়ত হবে, অনেকটা রুঢ় ভাষায় তাকে মন্তব্য করেছি। পরে অবশ্য খারাপ লেগেছে,এটাত social media. কিন্তু আমি তার মঙ্গল কামনা করেই বলেছিলাম।কেন প্রতিভার বিকাশে উদাসীনতা থাকবে।প্রকাশের দায়িত্ব নেবার যথেষ্ঠ যোগ্যতা যখন আছে একজনের। দার্শনিক ফয়েরবাখ এর চমৎকার একটা কথা আছে। 'মানুষ যখন পৃথিবীতে আসে তখন নেহাত সে প্রাকৃতিক জীব,মানুষ সভ্য হয়েছে তার সংগ্রামে, তার চেতনায় তার ব্যক্তিত্বে'।
সমাজের কতজন সভ্যতাকে টেনে নিয়ে এসেছে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তা আমরা জানি।বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ছয় থেকে আটভাগ মানুষ এখানে সম্পৃক্ত হয় সরাসরি । কেউ যখন গাইছেন বা লিখছেন বা আঁকছেন,তখন তাকে ওই আট শতাংশের কাতারে নেতৃত্ব দিয়ে সহ যোদ্ধা সহ বাকী বিরানব্বই জনকে পথ দেখাতে হবে অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যের আলোকে।এই বিরানব্বই জন কিন্তু প্রকৃতভাবেই সরাসরি অংশ নিবেনা তবে অনুসরণ করবে কর্মসূচি।সংখ্যাগরিষ্ঠের কথাই ধরি, তাদের যোগ্যতার মাপ কাঠি কি।আমার পরিচিত এক গুনী গাইয়েকে প্রশ্ন করেছিলাম,বলোতো আ,জব্বার সাহেব গান বেশী বোঝেন নাকি ওই রিকশাচালক ভাই যিনি তার গান অবসরে শুনছেন তিনি।জবাবে বলেছিলো, ভাইয়া অবশ্যই জব্বার সাহেব।আচ্ছা এখানে যদি আমি এভাবে ধরি যে,জব্বার সাহেবকে ওই শ্রোতার আস্থা অর্জনের জন্য দীর্ঘ সময় সাধনা করতে হয়েছে। তাহলে,উত্তর কি আসতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।তাই বলছিলাম যে যতবেশী জানুক,বাকি বিরানব্বই জনের, প্রকৃতি হতে পাওয়া অপ্রকাশিত ধারনার সাথে নিজকে সম্পৃক্ত করতে হবে।তবেই তারা অধিকার সমর্পন করবে সেই গুণ অর্জনকারীর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে।তাদেরকে আজ খুব দরকার এই পশ্চাদমুখী প্রবনতার বিরুদ্ধে সংগ্রামে।সবার সুকুমারবৃত্তি চর্চার উদ্যেশ্য তাই হবে বলেই আমরা প্রত্যাশা করি।
রাজনৈতিক বিপ্লবী হবার দরকার নেই,ওটা অনেক কঠিন পথ।কন্ঠ সৌকর্য প্রকাশ হোক সেও সঠিক পরিবর্তনের অনুকূল শক্তি। তাই ফ্রেডেরিক এংগেলসের ভাষায়,পা দিয়ে না হেটে মাথা দিয়ে হাটুন।কন্ঠশিল্পী বল্লেও কন্ঠ দিয়ে নয়, গভীর থেকে গাইতে থাকুন আপনারা পারবেন জানি।আমরা আলো চাচ্ছি আলোকসজ্জা নয়।জলিল সাহেবকে ধন্যবাদ আমার সময়টা তবু কাটলো নিরর্থক হলেও কিছুটা লেখে।আড্ডা দিয়ে তো নয়।আর সেই মানুষটাকে, যাকে রুঢ়ভাবে কিছু লিখেছিলাম।তার মঙ্গলের জন্যইত বলেছিলাম। আর আমার অন্তারাত্মাকে,যে উঁকি দিয়ে গল্প করবে নিজের সাথে,অনেকটা সেই গানের মতই 'ছলাৎছল,ছলাৎছল,ছলাৎছল,ঘাটের কাছে গল্প করে নদীর জল'।কবির সুমনের গানের কলি দিয়ে,সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আর বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে- অনু।
ঠিকানা : অনামিকা কনকর্ড টাওয়ার, বেগম রোকেয়া স্মরনী, তৃতীয় তলা, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা- ১২১৬
মোবাইল : ০১৭৭৯-১১৭৭৪৪
ইমেল : info@sirajganjkantho.com