নেপথ্যে সম্পদের লোভ-- সিরাজগঞ্জে ১৫ বছর ধরে দুই ভাইয়ের বিরোধ
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

  

নেপথ্যে সম্পদের লোভ-- সিরাজগঞ্জে ১৫ বছর ধরে দুই ভাইয়ের বিরোধ

আব্দুল জলিল
০৫-১১-২০২৩ ০৪:৩৬ অপরাহ্ন
নেপথ্যে সম্পদের লোভ-- সিরাজগঞ্জে ১৫ বছর ধরে দুই ভাইয়ের বিরোধ

স্টাফ রিপোর্টার:

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে মৃত বাবা-মায়ের সম্পত্তি থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ছোট ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়াকে (৫৮) বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে মেজো ভাই রেজাউল হক মিয়ার (৬৬) বিরুদ্ধে। পৈতৃক সম্পত্তি নিজের কব্জায় রেখে উল্টো ছোট ভাই ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সাজানো ছয়টি মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন রেজাউল হক।

শনিবার (৪ নভেম্বর) রাতে সিরাজগঞ্জ শহরের দৈনিক কলম সৈনিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ছোট ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন  ও তার স্ত্রী তাছলিমা খাতুন এ অভিযোগ করেন। 

অভিযুক্ত রেজাউল হক মিয়া ওই উপজেলার মুগবেলাই গ্রামের মৃত আবুল হোসেন মিয়ার ছেলে। তিনি জার্মান প্রবাসী।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমার বাবা আবুল হোসেন মিয়া ১৯৮১ এবং মা ২০০২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। আমি তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছোট। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে বড় ভাই শামছুল আলমও মৃত্যুবরণ করেন। এরপর মেজো ভাই রেজাউল হক বাবার ৩ বিঘা ২৯ শতক ও মায়ের নামে ৩১ বিঘা ২৯ শতক জমি দেখভাল করছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালের দিকে আমি ওয়ারিশ হিসেবে জমি বন্টন করতে চাইলে আমার সাথে তিনি বিরোধে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে সে তার স্বার্থ হাসিল করতে আমাকে ও আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একে একে ছয়টি মামলা করে। জমির ভাগ চাওয়ায় প্রথমে ২০০৮ সালের দিকে দেড় কোটি টাকা দাবি করে মামলা দায়ের করে। এভাবেই একে একে ছয়টি মামলায় আমাকে, আমার স্ত্রী ও সন্তানদেরও আসামী করে হয়রানী করা হচ্ছে।

মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী মা-বাবা মারা যাওয়ার পর ওয়ারিশসূত্রে আমরা ওই সম্পত্তির দাবিদার ও হকদার। কিন্তু সে সম্পত্তির লোভে পড়ে আমার প্রাপ্য সম্পত্তি বুঝে না দিয়ে উল্টো ছয়টি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

জাহাঙ্গীর আরও বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী তাছলিমা খাতুন সুনামের সাথে শিক্ষকতা পেশায় রয়েছি। এজন্য দীর্ঘদিনের বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. কেএম হোসেন আলী হাসান, কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ সবুজ ও জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এবং সম্পাদকের দারস্ত হই। তারা একাধিকবার মিমাংসা করার চেষ্টা করলেও মেজো ভাই তাদের মানেনি। পরবর্তী কোন কুলকিনারা না পেয়ে আমাদের নিকট আতœীয় সাবেক মন্ত্রী পরিষদের সচিব কবির বিন আনোয়ারের কাছে যাই। তিনি বিস্তারিত শুনে দীর্ঘদিনের এ বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। সেই প্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরের দিকে কবির বিন আনোয়ার আমাদের বাড়িতে যান। এরপর উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদমান বিরোধ যেন সমাধান হয় ও তাদের মধ্যে যেন সু-সম্পর্ক বজায় থাকে এজন্য আমাকে দিয়ে মেজো ভাইয়ের কাছে মাফ নেয়ান। কিন্তু ভাই সমাধানের দিকে না গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে কবির বিন আনোয়ার অসন্তষ্ট হয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যান। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় মেজো ভাই আবারও উল্টো মিথ্যা অভিযোগ করে একটি সংবাদ সম্মেলন করে। এতে বলা হয় তাকে নাকি আমরা মারধর করেছি। মূলত ওই বৈঠকে কবির বিন আনোয়ার আমাদের দুই ভাইকে আপস হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। কাউকে মারধর করার কোন প্রশ্নই আসেনা।এদিকে অভিযুক্ত রেজাউল হক মিয়া বলেন, আমি ১৯৭৭ হতে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মায়ের নামের জমি ক্রয় বাবদে জার্মান থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা পাঠিয়েছি। ওই টাকা দিয়েই মূলত মায়ের নামের জমিগুলো ক্রয় করা হয়। এজন্য ওই জমি আমার। এখানে ছোট ভাই ও বোনের কোনো প্রাপ্যতা নেই। ছোট ভাইয়ের দাবি অযৌক্তিক। পিতা মাতার মালিকানা জমি তো প্রত্যেক ভাই ও বোন পাবে, এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শহিদুল্লাহ সবুজ বলেন, তাদের দুই ভাইয়ের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এজন্য আমি নিজেও বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু রেজাউল হক কারও কথা না শোনায় নিষ্পত্তি হয়নি।

এ প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, উভয় আমার আত্মীয়। তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ। কয়েকটি মামলা মোকদ্দমাও চলছে। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে স্থানীয় শিক্ষকরা মানববন্ধনও করেছিল। এজন্য আমি ভাবছিলাম বসে মিমাংসা করে দেই। পরে রেজাউল হকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে দাওয়াত নিয়ে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। এতে জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিষ্পত্তি চাইলেও রেজাউল হক চায় না। পরে আমি তাদের অনুরোধ করে এসেছি নিজেদের মধ্যে ঝামেলা না করার জন্য।


আব্দুল জলিল ০৫-১১-২০২৩ ০৪:৩৬ অপরাহ্ন প্রকাশিত হয়েছে
এবং 678 বার দেখা হয়েছে।

পাঠকের ফেসবুক মন্তব্যঃ
Loading...
  • সর্বাধিক পঠিত
  • সর্বশেষ প্রকাশিত

  

  ঠিকানা :   অনামিকা কনকর্ড টাওয়ার, বেগম রোকেয়া স্মরনী, তৃতীয় তলা, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা- ১২১৬
  মোবাইল :   ০১৭৭৯-১১৭৭৪৪
  ইমেল :   info@sirajganjkantho.com