শিরোনামঃ
![]() ০৮-০৬-২০২৩ ০৬:১৯ অপরাহ্ন |
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় অবস্থিত কর্মসংস্থান ব্যাংকের শাখায় ঋণ নিতে প্রতি লাখে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি ওই শাখার সহকারী অফিসার সাইদুল রহমান রানা তার পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে উৎকোচের টাকা লেনদেন করেন । প্রায় পঞ্চাচজন গ্রাহকের নিকট থেকে এই সুবিধা নিয়েছেন। এইসব ঘটনা প্রকাশ পেলে নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার দিনভর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের ঋণ গ্রহিতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তদন্ত করছেন বগুড়া জোনাল অফিসের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও) আক্তারুজ্জামান ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের আছাব আলী (৩৬) পেশায় একজন প্রান্তিক কৃষক। তিনি এক লাখ টাকা ঋণের আশায় কর্মসংস্থান ব্যাংক কাজিপুর শাখায় গত মার্চ মাসে কাগজপত্র জমা দেন। কিন্তু টাকা আর পাচ্ছিলেন না। এরই মধ্যে ওই ব্যাংকের সহকারী অফিসার সাইদুল রহমান রানা তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। নিরুপায় হয়ে আসাব আলী ওই শর্তে রাজী হন এবং সাত হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করেন। বাকিটা ঋণ পাবার পরে দেবেন বলে কথা হয়। এরপর মে মাসের শুরুর দিকে এক লাখ টাকা ঋণ পান ওই কৃষক। আর ঋণ দিতেই উৎকোচের বাকি টাকা কেটে রাখা হয়। আসাব আলী জানান, দুই মাস আমাকে ব্যাংকে ঘুরিয়েছে। কিন্তু ঋণ দেয়নি। স্থানীয় সুদের ব্যবসায়ী লাল মিয়ার ম্যাধ্যমে যেদিন রানা সাহেবকে ঘুষ দিলাম, তার একদিন পরেই আমার ঋণ পাস হয়েছে।
উপজেলার সোনামুখী বাজারের ব্যবসায়ী রানা আহম্মেও এমনি করে উৎকোচ দিয়ে ঋণ নিয়েছেন বলে জানান। রানা বলেন, ঋণ পেতে স্থাণীয় অন্যান্য বাংকের নো অবজেকশন সনদ লাগে। কিন্তু রানা সাহেব যাচাই বাছাইয়ের সিল নিজেই বানিয়ে কাগজ তৈরি করেন। উৎকোচ নেবার কথা জানিয়েছেন জহুরুল ইসলাম, মামুনুর রহমানসহ একাধিক ঋণ গ্রহিতা।
এদিকে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে গোপনে ঋণ গ্রহিতাদের ম্যানেজ করতে তৎপরতা চালাচ্ছেন রানা সাহেব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনামুখী বাজারের কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর অভিযোগ, লাখে সাত থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ ছাড়া ঋণ পাওয়া যায় না। ব্যাংকের সহকারী অফিসার সাইদুল রহমান রানা সোনামুখী বাজার এলাকার লাল মিয়া নামে এক সুদি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে লোন পাস করা বাবদ লাখপ্রতি ১০ হাজার টাকা নেন। লাল মিয়ার সঙ্গে ওই ব্যাংক কর্মকর্তাও সুদের ব্যবসা করেন। তাদের প্রায় আড়াই কোটি টাকা এলাকার দুই শতাধিক ব্যক্তির কাছে দেওয়া আছে। প্রতি সপ্তাহে পাস বইয়ের মাধ্যমে তারা টাকা উত্তোলন করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মসংস্থান ব্যাংকের কাজিপুর শাখার সহকারী অফিসার সাইদুল রহমান রানা বলেন, অনেকে খুশি হয়ে কিছু দেয়। আমি জোর করি না। আর সোনামুখী এলাকা থেকে নতুন কেউ ঋণ নিতে আসলে আমার পরিচিত লাল মিয়ার কাছে পাঠিয়ে দিই। কারণ তিনি আমাদের ব্যাংকে দীর্ঘদিন ধরে লেনদেন করেন।
লাল মিয়া জানান , ব্যাংকের সহকারী অফিসার রানা আমার সুপরিচিত। তিনি এলাকার সবাইকে চেনেন না। তাই ঋণ নিতে চাইলে আমার কাছে লোকজন পাঠিয়ে দেন। আমি তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে ঋণ পাস করে দিই।
আপনার সুদের কারবার আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু টাকা ব্যবসায়ীদের অল্প সুদে দিই।
কর্মসংস্থান ব্যাংকের কাজিপুর শাখা ব্যবস্থাপক কাউসার আহম্মেদ বলেন, কয়দিন আগেও অফিসে এসে সহকারী অফিসার রানার বিরুদ্ধে স্থানীয় একজন অভিযোগ করেছে। এখন সিনিয়র অফিসার স্যার আসছেন। তদন্ত চলছে।
বগুড়া জোনাল অফিসের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও) আক্তারুজ্জামান জানান, কাজিপুর শাখাটির আদায় অনেক ভালো। আমরা এই শাখাকে নিয়ে গর্ব কনি। কিন্তু কি কারণে এমন খবর প্রকাশ পেলো তার তদন্ত করছি। বুধবারও দিনভর এলাকা ঘুরেছি। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঠিকানা : অনামিকা কনকর্ড টাওয়ার, বেগম রোকেয়া স্মরনী, তৃতীয় তলা, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা- ১২১৬
মোবাইল : ০১৭৭৯-১১৭৭৪৪
ইমেল : info@sirajganjkantho.com