আজ আহমদ ছফার ৮০ তম জন্মদিন
১৫ অক্টোবর, ২০২৫ ০৪:৫৩ অপরাহ্ন

  

আজ আহমদ ছফার ৮০ তম জন্মদিন

আব্দুল জলিল
৩০-০৬-২০২২ ০৬:৩৫ অপরাহ্ন
আজ আহমদ ছফার ৮০ তম জন্মদিন

রুদ্র ফারাবিঃ

বাংলা সাহিত্যে যাদের বড় লেখক বলা হয়, তাদেরও একজন বড় লেখক আছেন।

তিনি আহমদ ছফা। সত্তর পরবর্তী প্রায় প্রতিটা লেখকের মেন্টর বলা হয় তাকে। শুধু বাংলা সাহিত্য নয়, বাংলা সমাজ জীবনে ও তাঁর অনেক অবদান। নিজের নাম নিয়ে কে যেন একবার খুত ধরেছিলো। ছফা নয়, সফা হবে। তিনি একগুঁয়ের মতো বলেছিলেন ছফা, সমস্যা কোথায়? আজীবন গেঁয়ো, নাম ছফা নিয়ে কাটানোর মতো মনের জোর তাঁর ছিলো। এই এক গুঁয়েমির জন্যই জীবনে অনেক কিছু হারাতে হয়েছে তাকে। বাংলা একাডেমী থেকে পি এইচ ডির জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। সেই পিএইচডিও শেষ করতে পারলেন না। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে লেখকদের জন্য তিনি তৈরি করেছিলেন, "লেখক শিবির সংগঠন"। ওই লেখকদের অনেকেই পরে বাংলা একাডেমীর কর্তাব্যাক্তি হয়েছিলেন। কিন্তু এই মহান লেখককে তারা কোনোদিন পুরস্কার দেওয়ার সৌজন্যতা দেখাননি। একবার প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদ একাডেমির মিটিং এ তার ব্যাপারে কথা তুললেন। আহমদ ছফা ব্যাপারটা শুনে হুমায়ূন আহমেদকে ডেকে বললেন, আপনি কোনোদিন আমার ধারে কাছেও আসবেন না। ছফা ছিলেন এমনই ব্যাক্তিত্ববান লেখক।

তিনি মহান সাহিত্যিক গ্যাটের কিছু অংশ অনুবাদ করলেন বারো বছর পরিশ্রম করে। লেখাটুকু জনপ্রিয় হলো। তারপর তিনি অনুবাদ বন্ধ করে দিলেন। আরেক মহাজন সলিমুল্লাহ খান বাকি অনুবাদ নিয়ে জিজ্ঞেস করায় জানালেন, “আমি গ্যাটের অনুবাদক হিসাবে বেঁচে থাকতে চাই না।”

লিখলেন ‘প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা’। আমার কাছে মনে হয় উনিই প্রবীণ বট। আমরা তাঁর চারপাশে ছোট ছোট চারাগাছ।

উপন্যাস লিখেছেন বেশ কয়টা। অলাতচক্র, ওঙ্কার, গাভী বিত্তান্ত, সূর্য তুমি সাথী, পুষ্প-বৃক্ষ ও বিহঙ্গ পুরাণ। এক একটা উপন্যাস দিয়ে এক এক জায়গায় কুড়াল চালিয়েছেন। তাঁর খুঁড়াখুঁড়ির জায়গা থেকে আমরা আজকাল ফসল ফলাই।

তবে আহমদ ছফা ইন্টেলেকচুয়াল হিসাবে অন্য সবাইকে ছেড়ে আকাশের সমান উচ্চতায় যেখানে উঠে গেছেন সেটা প্রবন্ধ সাহিত্য। তিনি বুদ্ধিজীবীদের জাতটা ধরতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিবৃত্তিক অন্তঃসারশূন্যতার কথা তার মতো এতো পরিস্কারভাবে আর কেউ ধরতে পেরেছিলেন বলে আমার জানা নাই।

সেই ১৯৭২ সালেই তিনি ঘোষনা করেছিলেন, “ বুদ্ধিজীবীরা যা বলতেন সেগুলো শুনলে দেশ স্বাধীন হতো না। আর এখন যা বলছেন সেগুলো শুনলে দেশ সামগ্রীকভাবে আগাবে না”। কথাটা এক ফুটাও মিথ্যা প্রমাণিত হয়নি। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের বেশিরভাগই কৌশুলি। তারা পাকিস্তানের সময় পাকিস্তানপন্থি বিবৃতি দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও তাদের একই দশা। সরকার যদি অন্যায়ও করে তারা এই নিয়ে বিনিয়ে সেটাই সমর্থন করেছেন। এই যে, স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০বছরেও একটা জাতির রাজনৈতিক কলুষতা দূর হয়নি, তার জন্য এইসব বুদ্ধিজীবীরা দায়ী।

এক্ষেত্রে একমাত্র আহমদ ছফাই আলাদা ছিলেন। তিনি বাঙালির জাতটা ধরতে পেরেছিলেন। এই জাতের সংকট থেকে উত্তরণের উপায় বাতলে দিয়েছিলেন। আমাদের এখন সময় হয়েছে গুরু আহমদ ছফার দেখানো পথে বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা করা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের জাতীয় মুক্তির পথ আহমদ ছফার দেখানো পথেই সম্ভব।

গুরু আহমদ ছফার আজ ৮০তম জন্মদিন। গুরুর জন্মদিনে অধম শিষ্যের বিনয়াবনত শ্রদ্ধা।

ছফারা যুগে যুগে জন্মায় না, একশো বছরে একবারই জন্মায়।” এই মহাসত্য ছফা নিজেই বলে গিয়েছেন।

আজ ৩০শে জুন, আহমদ ছফার জন্মদিন। উনার মতো দুঃসাহসী ব্যক্তির অভাব বাংলাদেশে কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। শুভ জন্মদিন কালের নায়ক।

 


আব্দুল জলিল ৩০-০৬-২০২২ ০৬:৩৫ অপরাহ্ন প্রকাশিত হয়েছে
এবং 414 বার দেখা হয়েছে।

পাঠকের ফেসবুক মন্তব্যঃ
Loading...
  • সর্বাধিক পঠিত
  • সর্বশেষ প্রকাশিত

  

  ঠিকানা :   অনামিকা কনকর্ড টাওয়ার, বেগম রোকেয়া স্মরনী, তৃতীয় তলা, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা- ১২১৬
  মোবাইল :   ০১৭৭৯-১১৭৭৪৪
  ইমেল :   info@sirajganjkantho.com