স্বল্প আয়ের মানুষের হুতাশায় জরাজীর্ণ, নেই পাতে ভাত
দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক জীবন প্রণালী সব আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। প্রায় এক বছরের বেশি সময় পার হলো করোনা ভাইরাস বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলেছে। চতুর্দিকে মৃত্যুর মিছিল, মানুষের হাহাকার আর্তনাদ। দিন যতই যাচ্ছে ততই এ করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের হার বেড়েই চলছে। কিন্তু লকডাউন করোনা থেকে মানুষকে মুক্ত করলেও বিপাকে পড়ছে দেশের স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। তাদের পাতে নেই ভাত। এসব মানুষ প্রতিনিয়ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শ্রম বিক্রি করে সংসারের চাকা সচল রাখে।
প্রত্যহ সকাল হলে স্বল্প আয়ের শ্রমজীবি মানুষের মাথায় চিন্তার ভাজ পড়ে যায় পরিবারের সদস্যদের মুখে ভাত দিতে হবে। চিন্তা মাথায় নিয়ে শ্রম বিক্রি করে যান তারা। কোন একদিন শ্রম বিক্রি না করতে পারলে, তাদের চুলায় আগুন জ্বলে না। দেশে লক্ষ লক্ষ স্বল্প আয়ের শ্রমিক রয়েছে। তারা প্রত্যেক দিন শ্রম বিক্রি করে তাদের সংসারের চাকা সচল রাখে। তাই সকল মানুষের পেটের হাহাকারের নিকট মৃত্যুর কোন ভয় নাই। এদের কাছে কোন ভাইরাসের ভয় নেই। এসব মানুষের ভয় একটাই পরিবারের মুখে ভাতের ব্যবস্থা করে না দেয়াটা।
তাই স্বল্প আয়ের শ্রমজিবী মানুষ সকালের সূর্য উদয়ের সাথে সাথে শ্রম বিক্রির জন্য বেরিয়ে পড়ে। স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষের এখন গলার কাঁটা হয়েছে লকডাউন। দেশের সরকার মানুষকে বাঁচাতে যখন লকডাউন দিয়েছে তখনই এ সকল স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ বিপাকে পড়েছে। লকডাউনে খেটে খাওয়া মানুষের পেটের ভাত যোগাবে না। এসব স্বল্প আয়ের মানুষ শ্রম বিক্রি করতে না পারলে কি খাবে তারা? লকডাউনে খেটে খাওয়া মানুষের নিকট আশির্বাদ নয়, যেন অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে সিরাজগঞ্জের বেলকুচির চালা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ভ্যান শ্রমিক সাদ্দাম হোসেন বলেন,আমাদের কাছে করোনার কোন ভয় নেই,কিন্তু পেটের ভাতের ভয় আছে। এক বেলা কাজ করতে না পারলে পরিবারের মুখে আহার তুলে দিতে পারবো না। করোনার ভাইরাস থেকে বাঁচতে সরকার দেশে লকডাউন দিয়েছে এটা আমাদের ভালোর জন্য হয়তো। কিন্তু কি করবো? কাজ বন্ধ থাকলে আমাদের অনাহারে থাকতে হবে। আমাদের তো আর একবেলা দু'মুঠো খাবার তুলে দিবে না কেউ।
নছিমন চালক আনোয়ার বলেন, লকডাউন, করোনা ভাইরাস এসব কিছুই বুঝি না। ঘরে ভাত নেই, রাস্তায় নামলে পুলিশ পিডায়, কেউ আমাগো দুঃখ বুঝে না। আমার ঘরে বেশ ক'দিন হলো চাল নেই। এভাবে চলতে থাকলে আমরা খাবো কি ভেবে পাইনা? আমার মতো এসব শ্রমিক দিন মজুরের দায়ভার কে নেবে?
বেলকুচি পৌর এলাকার ফল ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী এই প্রতিবেদককে জানায়, বেচা কেনা নেই, মন ভাল নেই। ফলগুলি পঁচে যাচ্ছে। লকডাউনে মানুষ বাজারে আসে না। মানুষের কর্ম বন্ধ, কেনার সামর্থ হারিয়েছে ফেলেছে। তারা এগুলি না কিনলে আমাদের ব্যবসা হবে কি করে। আমরা ভাল নেই দিন দিন আমরা বিপাকে পড়ে যাচ্ছি। কবে আমরা লকডাউনে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাবো আল্লাহ ভাল জানে।
বেলকুচি পৌর এলাকার মুকুন্দগাঁতী বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী আবু ইউসুফ এই প্রতিবেদককে জানান, করোনা, লকডাউনে পুলিশের তাড়া আর পারছি না। একদিকে যেমন মৃত্যুর ভয় অন্যদিকে ব্যবসা বাণিজ্য কিছুই নেই। কি করবো ভেবে পাই না। কবে এ থেকে পরিত্রাণ পাবো তা অজানা।