একমাত্র উপার্জনক্ষমকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার
গ্রামটির সড়ক গুলোতে যেন স্তব্ধ নিরবতা চলছে। একটু সামনে এগুতেই দৃষ্টি পরে গেলো অনেক নারী পুরুষ ও বাচ্চা ছেলে মেয়ে একটি বাড়িতে অনেক ভিড় জমাচ্ছেন। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই যেন কান্নার আহাজারি ভেসে আসলো কানে। সামনে দৃষ্টি মেলাতেই দেখা মিললো সন্তান হারা মায়ের কান্নার আহাজারি। ঘরের মধ্যে নিহতের স্ত্রী স্বজনদের কান্নার সুরে আকাশ বাতাশ যেন অনেক ভাড়ি হয়ে উঠেছে বাড়ির আশপাশে। একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে মা জরিনা খাতুনের আহাজারিতে বাড়িটি যেন দিশেহারা হয়ে পরেছে ।
শনিবার (২৭ মার্চ) সকালে সিরাজগঞ্জের বেলকুচির দৌলতপুর ইউনিয়নের আজগড়া গ্রামে জামাত মোড় এলাকায় নিহত আব্দুল জলিলের বাড়িতে গিয়ে এমনই করুন দৃশ্য চোখে পড়ে যায় । এসময় বাড়িটির বারান্দায় জলিলের মা জরিনা খাতুন বুক ফাটিয়ে কেঁদে কেঁদে আহাজাড়ি করে বলছেন, আমরা এখন কোথায় যাবো কি করবো। আমার সন্তানকে কে মারলো, কারা আমার বাবাকে মারলোরে..!
নিহতের স্ত্রী তাসলিমা খাতুন (৩১) কান্না জড়িত কন্ঠে জানায়, অনেক কষ্ট করে দুটি সন্তান ও বৃদ্ধ শ্বাশুরীকে নিয়ে আমাদের জীবন চলে। নদীতে মাছ ধরে যে টুকু রোজগার হয় তাই দিয়ে কোন মতে সংসার চলে। করোনার জন্য মাঝে মাঝে রিকশা, ভ্যানও চালাইতো তার স্বামী। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে এভাবে কারা হত্যা করলো সে বিষয়ে তিনি কিছুই বলতে পারেন না। তবে যারাই হত্যা করুক তার যেন সুষ্ট বিচার হয় সে দাবি জানালেন নিহতের স্ত্রী।
কথা হয় নিহতের ক্লাস টুতে পড়ুয়া শিশু শক্তির সাথে। ছোট বোন জ্যোতিকে কোলে নিয়ে কান্নায় অশ্রুভেজা চোখে শক্তি বলেন, তাঁর বাবা সেদিন দুপুরে বাড়ি থেকে খেয়ে গেছেন আর ফেরেননি। শুনেছে তাঁর বাবাকে কারা যেন মেরে ফেলছে।
একটু সমবেদনা জানাতে শরীক হতে বাড়িতে এসেছে গ্রামের অনেক নারী পুরুষ। কারও মুখে এই শোকের শান্তনা দেয়ার মত ভাষা জানা নেই। স্থানীয়রা জানান,এ পরিবারটি ছিল অনেক অভাব অনটনে ভরপুর তবে বাহিরের কারও নিকট কখনও হাত পাততে চোখে পড়েনি। এমন পরিবারের বিপদ দেখে আমরাই হুতাশ হয়ে গেছি।
এনায়েতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান সংবাদ কর্মীদের জানায়, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের ভাতিজা নান্নু বিশ্বাসসহ ৭২ জনকে আসামী করে নিহতের চাচা শ্বশুর জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ২৪ তারিখে রাতে মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, চৌহালীতে সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বুধবার (২৪ মার্চ) বিকেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন আব্দুল জলিল। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এ ঘটনায় দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা যায়। গুরুতর আহত ৩জনকে মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।