মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশবকাল
১৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:৫২ পূর্বাহ্ন

  

মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশবকাল

আব্দুল জলিল
১৬-০৩-২০২১ ০৫:৪৫ অপরাহ্ন
মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশবকাল

                                       আবদুল জলিল

মা মাতৃভূমি ও মাতৃভাষাকে যিনি ভালোবেসে জীবন শুরু করেছিলেন আর নিজের প্রাণ উৎস্বর্গ করে দেশের মানুষকে দিয়ে গেছেন সবচেয়ে দামী জিনিস স্বাধীনতা, সেই মহান নেতা, আমাদের প্রিয় খোকা। বাবা-মার আদরের এই খোকাই একদিন বঙ্গবন্ধু উপাধীতে দেশের মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

 বাবা-মার আদরের খোকা গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে ইংরেজি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বাংলা ১৩২৭ সনের ২০ চৈত্র, মঙ্গলবার রাত ৮ টায় জন্মগ্রহণ করেন। মেখ মুজিবুরের পূর্বপুরুষ শেখ আউয়াল মোহল আমলে ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলায় আসেন। তার বংশধরগণ প্রথমে চট্টগ্রাম, পরে সোনার গাঁও হয়ে বৃহত্তর ফরিদপুরে আসেন। সেই বংশের ছেলে শেখ মুজিব। পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান, মায়ের নাম সায়েরা বেগম। বাবা লুৎফর রহমান পেশায় ছিলেন আদালতের একজন বিশিষ্ট কর্মচারী। তার তৃতীয় সন্তান ছিলেন খোকা। পিতার আদর্শে গড়ে ওঠা শেখ মুজিব ছিলেন স্পষ্টভাষী, ন্যায়পরায়ণ। তার জীবদ্দশায় কখনই তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি।

গ্রাম বাংলার আর দশটা গ্রামের মতই ছায়াঢাকা, পাখিডাকা গ্রাম টুঙ্গীপাড়া। এই গ্রামের শ্যামল ছায়াঘেরা পরিবেশে, পাখ-পাখালির কলতানে ভরপুর প্রকৃতির অকৃত্রিম পরিবেশে বেড়ে ওঠেন শেখ মুজিব। মাকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন। যা তার ভবিষ্যৎ জীবনে  উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে উঠতে সহায়তা করেছিল।

 

 গীমাডাঙ্গা-টুঙ্গীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখার মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। তার গৃহশিক্ষক ছিলেন পন্ডিত শাখাওয়াতুল্লাহ। তারপর মাদারীপুর  ইসলামিয়া হাইস্কুলে তিনি চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু পিতার বদলীজনিত কারণে শেখ মুজিবকে চলে আসতে হয় গোপালগঞ্জ শহরে।

এরপর ১৯৩৭ সালে তিনি গোপালগঞ্জের মিশন হাইস্কুলে ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থাতে তিনি ছিলেন একজন ডাকসাইটে স্পোর্টসম্যান। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক গিরিশবাবু মুজিবকে খুব আদর করতেন।

ইতিহাস ছিল মুজিবের প্রিয় বিষয়। নানা মহা মণীষী. দয়ালু শাসক, নেতা তাদের জীবনী পড়ে যেমন তিনি নিজের জীবনে সেসব গুণের সমাবেশ ঘটানোর সংকল্প গ্রহণ করতেন, তেমনি প্রজাপীড়নকারী শাসক, অত্যাচারী জমিদার, ইংরেজদের নানা বিষাদময় কাহিনী তার হৃদয়ে দাগ কেটে যেত। তিনি ভাবতেন কিভাবে মানুষকে এসব অত্যাচার-অন্যায়ের হাত থেকে রেহাই দেয়া যায়। সেইসাথে নতুন ইতিহাস সৃষ্টির অনুপ্রেরণা তিনি এখান থেকেই লাভ করেন।

ছোটবেলা থেকেই একটা প্রতিবাদী শক্তি মুজিবের মনে বেড়ে উঠতে থাকে। কোন অন্যায়কে তিনি কখনোই ছেড়ে কথা বলেননি। একটা ঘটনার কথা বলিÑ

গোপালগঞ্জের এক সমাবেশে পুলিশ বাধা দিলে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশের এই হস্তক্ষেপ কিশোর শেখ মুজিবের নিকট বিধিসম্মত মনে হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবাদী মন গর্জে ওঠে। তিনি সতীর্থ বন্ধুদের সাথে নিয়ে পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করলেন। আক্রমণের অস্ত্র ছিল ইট-পাটকেল।

আরো দুটি ঘটনার কতা বলি- একদিন মুজিব রাস্তা দিয়ে যেতে দেখেন এক বৃদ্ধ খালি গায়ে প্রচন্ড শীতে কাঁপছে। তিনি তৎক্ষণাৎ তার শাল চাদরটি তাকে দিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। মা জিজ্ঞেস করলে তিনি অপকটে তা বলে দিলেন। মা শুধু হাসলেন। এরপর একদিন বেশ কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে বাড়ি এসে মাকে বললেন তাদের সবাইকে খাওয়াতে হবে। মা হাসিমুখে তাদের খাওয়ালেন।

শেখ মুজিব যখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র তখন তার হটাৎ চক্ষুরোগ ধরা পড়ে। কিছুতেই তা উপশম হয়না। চোখের যন্ত্রনায় তিনি বই পড়তে পারতেন না। ফলে সাময়িকভাবে তার পড়ালেখায় ছেদ পড়ে।

কেটে যায় তিনটি বছর। কিন্তু হিয়া যার দিগন্ত প্রসারিত, চিন্তায় যিনি বিপ্লবী, মনে যার মানুষের ভাবনা তাকে আটকায় সাধ্যি কার! ১৯৩৯ সালে তিনি আবার ভর্তি হলেন অষ্টম শ্রেণিতে। যখন পুরো মনযোগ দিয়েছেন পড়া লেখায় এমন সময় ঘটলো এক ঘটনা। গোপালগঞ্জের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সেখানকার হিন্দু-মুসলমানদের মাঝে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সেই পরিস্থিতিতেও শেখ মুজিব মসজিদ প্রাঙ্গনের সেই নির্ধারিত অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করেছিলেন। এজন্য তাকে কম বুদ্ধিমত্তা ও সাহসের পরিচয় দিতে হয়নি। কিন্তু এই ঘটনাই তাকে রাজনীতির প্রথম পাঠের ছবকটি শিখতে হলো। তাকে হতে হলো পুলিশের হাতে বন্দী। যেতে হলো সাতদিনের জন্য জেলে। এই সাতদিনে কারাজীবন তথা রাজীতির প্রথম পাঠেই শেখ মুজিব যেন একজন পরিণত মানুষে রূপারিত হলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদী মন আরও সোচ্চার হয়ে উঠলো। তিনি বুঝলেন, এর বেশি বৈত নয়। কিন্তু অন্যায় চিরদিনই অন্যায়। তাকে বাড়তে দেয়া যায়না। পরবর্তিকালে মুজিব নিজে বলেছেন, যেদিন আমি জেলে গেলাম, সেদিন থেকেই আমার বালকত্বের অবসান ঘটলো।

দেশ তখন বৃটিশদের শাসনে অতিষ্ঠ। নানা কারনে তাদের চেপে দেয়া আইন এদেশের বিবেকবান মানুষদের ভাবিয়ে তোলে।  কিশোর মুজিবের মনেও এর ছায়া পড়ে। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে দেশকে, দেশের মানুষকে মুক্ত করতে তিনি সংকল্পবদ্ধ হন।

শুরু হলো রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা। এমন সময়ে আরেকটি ঘটনা ঘটলো।

গোপালগঞ্জের এলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। কিশোর মুজিব তার সান্নিধ্য লাভে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। ছুটে গেলেন সোহরাওয়ার্দী সাহেবের নিকট। মুজিবের আচরণ, কথাবার্তায় সোহরাওয়ার্দী বুঝে নিলেন এই ছেলে বড় হয়ে বড় মাপের কেউ একজন হবে। তাই তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন। মুজিবকে কাছে টেনে নিলেন। একজন পেলেন যোগ্য শিষ্য অন্যজন পেলেন স্বপ্নের রাজনৈতিক গুরু। শুরু হলো শিষ্যর রাজনৈতিক বিস্তার। গুরুর প্রতিটি বিষয় তিনি নিজের করে নিতে সচেষ্ট হলেন। সোহরাওয়ার্দী সাহেব গোপালগঞ্জ থেকে বিদায় নিলেন, কিন্তু বাধা পড়ে গেলেন শেখ মুজিবের হৃদয়ে। তাদের মধ্যে নিয়মিত পত্র আদান-প্রদান হতে থাকে। দুজন যোজন দূরত্বকে জয় করে নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শের লেনদেন হতে থাকে।

পিতা লুৎফর রহমান চেয়েছিলেন ছেলে তার হবে একজন ডাকসাইটে উকিল। দেশ ও দশের জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে। কিন্তু বুঝে গেলেন সে হবার নয়। তার প্রিয় খোকা যে হবে একজন রাজনীতিবিদ। ছেলের এই ইচ্ছের বিরুদ্ধে বাবা কখনই যাননি। ফলে শেখ মুজিবের নেতা হয়ে উঠতে আর কোন বাধাই রইলো না। এমনি করেই কিশোর শেখ মুজিব ১৯৪২ সালে গোপালগঞ্জের মিশন হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর উচ্চ শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে গোপালগঞ্জ ছেড়ে যান কোলকাতা।

এই কিশোর মুজিবই বড় হয়ে নেতৃত্ব দেন স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের। তারই প্রচেষ্ঠায় আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি আমাদের জাতির পিতা।


আব্দুল জলিল ১৬-০৩-২০২১ ০৫:৪৫ অপরাহ্ন প্রকাশিত হয়েছে
এবং 613 বার দেখা হয়েছে।

পাঠকের ফেসবুক মন্তব্যঃ
Loading...
  • সর্বাধিক পঠিত
  • সর্বশেষ প্রকাশিত

  

  ঠিকানা :   অনামিকা কনকর্ড টাওয়ার, বেগম রোকেয়া স্মরনী, তৃতীয় তলা, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা- ১২১৬
  মোবাইল :   ০১৭৭৯-১১৭৭৪৪
  ইমেল :   info@sirajganjkantho.com