শিরোনামঃ
![]() ১৩-০২-২০২১ ১০:০৫ পূর্বাহ্ন |
আবদুল জলিল :
সূর্যের তখনো তার চোখ খোলেনি। কুয়াশার চাদর ঘিরে আছে চারদিকে। এরই মধ্যে কাজিপুরে যমুনা তীরের মেঘাই, ঢেকুরিয়া, সিংড়াবাড়ি, শুভগাছা পয়েন্টে জড়ো হয়েছেন জেলেরা। রাত জেগে তারা যমুনা নদীর নানা পয়েন্ট থেকে মাছ ধরেছেন। সবার হাতে আছে মাছের ঝুড়ি কিংবা পাত্র। ঝুড়ি ভর্তি হরেক প্রজাতির টাটকা মাছ। এ মাছগুলো যমুনা নদীর অথৈ পানি থেকে ধরা হয়। এখানে শুধু যমুনার মাছ বেচাকেনা হয়। প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার সাথেই সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীর তীর ঘেসে বসে রাতভর সংগৃহিত টাটকা মাছের পসরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাজিপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে বহমান যমুনা নদী। ঢেকুরিয়া ঘাট থেকে ভাটির দিকে শুভগাছা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার নদী পথ। এই নদীর কুল ঘেষে ঢেকুরিয়া ঘাট, মেঘাই স্পার, শুভগাছা ঘাটসহ বেশ কয়েক স্থানে মাছ বেচাকেনা হয়। সকাল প্রায় ছয়টায় বাজার বসে। শেষ হয় সকাল আটটায়। আবার দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাজার বসে। প্রতিদিনই বাজার বসে। ভোরের আলো ফুটতে ফুটতেই বেচাকেনায় সরগরম হয়ে উঠে। মাছ তোলার পর হাকডাক শুরু হয়। যিনি বেশি দাম হাঁকছেন, তিনিই পাচ্ছেন মাছ। বাজারের মাছ ক্রেতাদের অধিকাংশ মাছ ব্যবসায়ী। সাধারণ ক্রেতা কম। নদীপাড়েই সার ধরে বাঁধা জেলেদের নৌকা। নৌকায় দেখা মিলল জেলে বণ্টু হালদারের সাথে। তাঁর নৌকায় আছে মাছ ধরার জাল।
আছে মাছের ঝুড়ি ও পাত্র। তিনি বললেন, তাঁর মতো অন্তত ৪০ জন জেলে নৌকায় মাছ ধরেন। সারা রাত মাছ ধরে বাজারে মাছ উঠান। মাছ বিক্রি করে আনন্দ চিত্তে বাড়ি ফেরেন। যমুনা পাড়ের এসব জেলে জীবিকার তাগিদেই মাছ ধরেন, কেনাবেচা করেন। তবে নেহাত জীবন বাঁচানোর তাগিদে এখানে মুখ্য না। দিনমান মাছ ধরার এ কর্ম, তাঁদের আনন্দের উৎসও বটে। নৌকায় বসা সনাতন নামে এক জেলে সে কথাই বললেন। তাঁর কথা, জালে যখন মাছ ধরা পড়ে, তখন খুব ভালো লাগে। অপেক্ষায় থাকি, কখন মাছ বিক্রি করবো। মাছ বিক্রি করতে আসা প্রবীণ জেলে বল্টু হালদার ও গোবিন্দ হালদার জানান, প্রায় ৩৫ বছর ধরে তিনি যমুনায় মাছ ধরছেন। সেই মাছ বিক্রি করেন নদীর তীরে কিংবা দূরের কোন হাট বাজারে। নদীর টাটকা মাছ পাওয়া যায় বলে দূরের লোকজন এখানে আসেন মাছ কিনতে।
এখানে টাটকা মাছের কদর বেশী। তবে তুলনামুলক দাম কম। মাছ কেনা ব্যবসায়ী লিটন, বাবলু ও ভজন মাঝি জানান, এখানে একদম টাটকা মাছ পাওয়া যায়। জেলেরা মাছ ধরে এখানে বিক্রি করেন। এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে বিক্রি করা হয় সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, শেরপুর ও ধুনটসহ বিভিন্ন শহরে। ক্রেতা যখন জানতে পারেন, এই মাছ যমুনা নদী থেকে ধরা, তখন দামও ভালো পাওয়া যায়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কমে আসে মাছ বেচাকেনার হাঁকডাক। কমতে থাকে লোক সমাগম। সকাল আটটা বাজতে বাজতেই জনশূন্য হয়ে পড়ে নদী তীর। আগামি দিনের প্রত্যাশায় তারা নিজের পথ ধরেন।
ঠিকানা : অনামিকা কনকর্ড টাওয়ার, বেগম রোকেয়া স্মরনী, তৃতীয় তলা, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা- ১২১৬
মোবাইল : ০১৭৭৯-১১৭৭৪৪
ইমেল : info@sirajganjkantho.com