শিরোনামঃ
দিলীপ গৌর ০৭-০২-২০২১ ০৫:৫২ অপরাহ্ন |
শাহজাদপুর প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের বড় মহারাজপুর গ্রামের মৃত মানিক মোল্লার মেয়ে রাজমিস্ত্রীর জোগালদার স্বামী পরিত্যাক্তা শিল্পী বেগম পেটের দায়ে বুদ্ধি ও বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ে সুমি খাতুন (১৭) কে খোলা আকাশের নিচে শিকলে বেঁধে রেখে কাজে যায় প্রতিদিন।
এই হাড়কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে খোলা জায়গায় না খেয়ে সারাদিন মা ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকে প্রতিবন্ধী কিশোরী সুমি। সুমি জানায়, তার এ ভাবে সারা দিন শিকলবন্দি হয়ে থাকতে ভালো লাগে না। সে সারাদিন না খেয়ে থাকে। এতে তার খুব কষ্ট হয়। এ থেকে সে মুক্তি পেতে চায়।
এ বিষয়ে মা শিল্পী বেগম বলেন, জন্মের সময় সুমি অস্বাভাবিক হয়ে জন্মায়। অনেক চেষ্টা করে তাকে বাঁচানো গেলেও ২ বছর পর তার বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর বিষয়টি ধরা পড়ে। অনেক চিকিৎসা করে কিছুটা সুস্থ হলেও সে এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। নিজ জ্ঞানে চলতে ফিরতে পারে না। ছেড়ে দিয়ে রাখলে হারিয়ে যায়।
তাই তাকে বাধ্য হয়ে শিকলে বেঁধে রাখতে হয়। তিনি বলেন, ২০ বছর আগে একই গ্রামের তাঁত শ্রমিক শুকুর চাঁনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তার ৩ মেয়ে। কোনো ছেলে নেই। সবার বড় সুমি। সুমি ও আমার চিকিৎসার খরচ জোগাতে অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এ নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ৪ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে তালাক হয়ে যায়।
এরপর বড়ভাই দিনমজুর মজিবরের বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন। রাজমিস্ত্রি জোগালির কাজ করে অসুস্থ মেয়ে সুমি ও ছোট আরেক মেয়েকে নিয়ে জীবন চালাই। তিনি বলেন, মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই ছিল না। তাই গ্রামের লোকেরা সাহায্য তুলে টিনের একটি ছাপড়া ঘর তুলে দিয়েছেন হতদরিদ্র ভাইদের বাড়ীতে। এখানেই সুমিকে নিয়ে থাকি।
আর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সুমির নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দিয়েছে। ৬ মাস পরপর সেখান থেকে ৪ হাজার টাকা অর্থাৎ মাসে সাড়ে ৬ শত টাকা করে ও সারাদিন জোগালদারি করে যা পাই তা দিয়েই কোনোরকমে আমাদের পেট চালাই। তিনি বলেন, অর্থাভাবে দীর্ঘদিন ধরে সুমি ও আমার চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে।
ফলে সুমি আগের চেয়ে এখন আরও বেশি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। সুমির জরুরিভিত্তিতে সুচিকিৎসা প্রয়োজন। এজন্য ৪-৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। আমার পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জরুরিভাবে তার জন্য মানবিক ও আর্থিক সাহায্য দরকার। অপরদিকে ঘরবাড়ীহীন দরিদ্র ভাইদের ২ শতক ভিটায় ভাই এবং আমাদের থাকার সংকুলান হয় না।
সরকারের দেয়া ঘর মুজিববর্ষে একটা ঘর পেলে তাও একটি নিশ্চিত মাথা গোজার ঠাই হবে। আমার চেয়ে অভাগা আর কে আছে বলুন। সারাদিন রাজমিস্ত্রির জোগালদারি করে সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরে রাস্তাবারা করে সুমিসহ দুই মেয়েকে নিয়ে সারাদিনের খাবার খাই। ক্লান্ত শরীরে কার কাছে তদবীরে যাবে সরকারের দেয়া ঘরের জন্য। যদি কেউ দয়া করত আমায়।
সচ্ছল ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে সুমির সুচিকিৎসা সম্ভব হবে; তা না হলে অকালে সুমির জীবন ঝরে যাবে। এ বিষয়ে শিল্পী খাতুনের বড়ভাই মজিবর রহমান বলেন, আমি খুব গরিব মানুষ। দিনমজুরি অথবা বাঁশের টুকরি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করি। বোন ও ভাগ্নিকে সাহায্য করা সম্ভব হয় না। কারণ আমার নিজেরই দিনমুজুরীর কাজ না করলে অনাহারে থাকতে হয়।
এ ব্যাপারে সচ্ছল ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে সুমির সুচিকিৎসা করা সম্ভব। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। অচিরেই প্রতিবন্ধী সুমির চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে ও তার থাকার জন্য সরকারিভাবে একটি ঘর দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঠিকানা : অনামিকা কনকর্ড টাওয়ার, বেগম রোকেয়া স্মরনী, তৃতীয় তলা, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা- ১২১৬
মোবাইল : ০১৭৭৯-১১৭৭৪৪
ইমেল : info@sirajganjkantho.com