নাব্যতা-সংকটে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর স্থবির ডুবোচরে আটকা ৩০টি জাহাজ
১৬ অক্টোবর, ২০২৫ ০৯:০২ অপরাহ্ন

  

নাব্যতা-সংকটে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর স্থবির ডুবোচরে আটকা ৩০টি জাহাজ

দিলীপ গৌর
২৩-০১-২০২১ ০৫:৩৯ অপরাহ্ন
নাব্যতা-সংকটে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর স্থবির ডুবোচরে আটকা ৩০টি জাহাজ

শাহজাদপুর প্রতিনিধি : নাব্যতা সংকটসহ নানামুখী সমস্যায় স্থবির হতে বসেছে সিরাজগঞ্জের -শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর। স্বাভাবিক অবস্থায় এ বন্দরে প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৫টি পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়লেও এ সপ্তাহ খানেক হলো দুই থেকে তিনটি করে জাহাজ ভিড়ছে। অপরদিকে এক সপ্তাহে আরিচা থেকে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর পর্যন্ত আটটি পয়েন্টে নাব্যতা সংকটে ৩০টি পণ্যবাহি জাহাজ আটকে আছে।

এ অবস্থায় বন্দরের হাজার খানেক শ্রমিকের মধ্যে চার শতাধিক শ্রমিকই বেকার হয়ে পড়েছে। নৌবন্দরে কর্মরত ব্যক্তিরা জানান, বাঘাবাড়ী নৌবন্দরটি উত্তরাঞ্চলের প্রধান নৌবন্দর। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার বেশির ভাগ সময় কৃষি কাজের সার এ নৌবন্দরের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া এলএসডি’র চাল, গম, জ্বালানি তেল, সিমেন্টের ক্লিংকার, কয়লা ও পাথরসহ আরও বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এ বন্দরে এসে জাহাজ ভেড়ে।

প্রতি বছর এই সময়ে সারসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী জাহাজের ভিড়ে এ নৌবন্দর সরগরম থাকলেও এবার জাহাজ কমে যাওয়ায় নৌবন্দর এলাকা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে রয়েছে।  বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, করোনা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার পর থেকেই এ নৌবন্দরে অচলাবস্থা দেখা দিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে নৌবন্দরে কর্মরত এক হাজার শ্রমিকের মধ্যে প্রায় সবাই বেকার হয়ে পড়েন।

পরে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হলেও শ্রমিকদের বড় একটি অংশ বেকারই থেকে যান। শ্রমিকসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভেবেছিলেন বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে চলতি বছরের শেষের দিকে নৌন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো নৌবন্দরটি স্থবির হতে বসেছে। বন্দরে কর্মরত ব্যক্তিরা জানান, বছরের এই সময়েই সবচেয়ে বেশি জাহাজ নৌবন্দরে ভেড়ার কথা।

অথচ নদীতে নাব্যতা কমে যাওয়ার কারণে যমুনা নদীতে বেড়া উপজেলার পেঁচাকোলা, মোহনগঞ্জ, কাজিরহাট,এলাকার বিভিন্ন স্থানে  নাব্যতা সংকটে আটকে যাওয়া এক সপ্তাহে মাত্র চারটি জাহাজ বন্দরে ভেরাতে পেরেছে। প্রতিদিন দুই থেকে তিনটির বেশি জাহাজ নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না। যে জাহাজগুলো ভিড়ছে সেগুলোকে নৌবন্দরের ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার আগে প্রায় অর্ধেক পণ্য ছোট নৌযানে খালাস করে ভিড়াতে হচ্ছে।

এতে পণ্য পরিবহনের খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পরিবহন ঠিকাদারেরা পণ্য পরিবহনে নগরবাড়ী ঘাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌ-ঘাট বেছে নিচ্ছেন। ফলে উত্তরবঙ্গের সবচাইতে বড় ঐতিহ্যবাহী বাঘাবাড়ী নৌবন্দরটিতে জাহাজের সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। জাহাজ চালকেরা জানান, পণ্যবোঝাই জাহাজগুলো আরিচা পর্যন্ত নির্বিঘেœ আসতে পারছে।

কিন্তু এর পরে বেড়া উপজেলার নতিবপুর, ব্যাটারিরচর, নাকালিয়া, পেঁচাকোলা ও মোহনগঞ্জ নামক স্থানে এসে বিপদে পড়ছে। এসব স্থানে যমুনা নদীর গভীরতা সাত থেকে আট ফুটে নেমে এসেছে। অথচ পণ্যবোঝাই জাহাজ চলাচলের জন্য কমপক্ষে ১০ ফুট গভীরতার প্রয়োজন। তাই জাহাজগুলোকে দৌলতদিয়ায় নোঙর ফেলে ট্রলারসহ বিভিন্ন ছোট নৌযানে আংশিক পণ্য খালাস করে তারপর নৌবন্দরে আসতে হচ্ছে।

এতে একদিকে পরিবহন ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি প্রচুর সময়ও অপচয় হচ্ছে। গতকাল ২২ জানুয়ারী শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে তিন-চারটি জাহাজ ভিড়ে রয়েছে। এর সঙ্গে ভিড়ে রয়েছে চার-পাঁচটি সারভর্তি ছোট নৌযান। সেগুলো থেকে প্রায় দেড় শ’ শ্রমিক সার নামাচ্ছিলেন। অথচ অন্যান্য বছর এই সময়ে দিনের যেকোনো সময়ে পাঁচ থেকে ছয় শ’ শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে বলে কর্মরতরা জানান।

বেড়া উপজেলার নাকালিয়া বাজার ও পেঁচাকোলা গিয়ে দেখা যায়, ২০ টি জাহাজ যমুনার ডুবোচরে আটকা পড়েছে। এ ছাড়াও রাজধরদিয়া, চরশিবালয় ও নাকালির চরে বিভিন্ন পয়েন্টে আরও ১০ টি জাহাজ আটকে আছে। কার্গোজাহাজগুলো রাসায়নিক সার, কয়লা, গম ও চাল নিয়ে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে যাচ্ছিল।

বিআইডবিøউটিএ আরিচা অফিস সূত্রে জানা যায়, রাসায়নিক সার ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য ১০ থেকে ১১ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্তমানে এ নৌপথে কোথাও কোথাও ৮ থেকে ৯ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। বাঘাবাড়ী নৌবন্দর থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত নৌপথের চরসাফুল্লা, নাকালিয়া, নাকালী, রাজধরদিয়া, নগরবাড়ীসহ ৮টি পয়েন্টে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

এই সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করছে। আজ ২৩ জানুয়ারী শনিবার থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচরে ৩০টি পণ্যবাহী জাহাজ আটকা পড়েছে। তিনদিনে আটকে পড়া চারটি জাহাজ ড্রেজিং করে পাড় করা হয়েছে। আটকে পড়া জাহাজের সংখ্য বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অপর দিকে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে শ্রমিক তদারকির দায়িত্বে থাকা বন্দর সরদার ওহাব আলী জানান, ‘কম জাহাজ ভেড়ায় নৌবন্দরের তিন ভাগ শ্রমিকের মধ্যে দুই ভাগ শ্রমিকই বেকার।

যারা কাজ করছে, তারা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় অর্ধেক মজুরি পাচ্ছে। এ অবস্থায় চরম দুরবস্থায় দিন কাটছে শ্রমিকদের। সবমিলে বন্দরটি স্থবির হতে বসেছে বলেও তিনি জানান।’  বিআইডবিøউটিএ এর সহকারী পরিচালক ও বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের পোর্ট অফিসার সাজ্জাদ রহমান বলেন, ‘এই নৌপথের বাঘাবাড়ী থেকে আরিচা পর্যন্ত অংশে আমাদের মৌসুমের শুরু থেকেই তিনটি ড্রেজার কাজ করে চলেছে।

ডিসেম্বরের শেষের দিকে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছিল ড্রেজিং করে সমস্যা সমাধান করা হয়েছিল। নদীতে দ্রæত পানি নেমে যাওয়ায় আবার সমস্যা দেখো দিচ্ছে। এখন মোট চারটি ড্রেজার কাজ করছে। আশা করছি আগামি ৫/৭ দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তবে বেশির ভাগ জাহাজই ১০ থেকে ১২ ফুট ড্রাফট নিয়ে বন্দরে আসছে যে কারনেই  সমস্যা বেশি হচ্ছে।’


দিলীপ গৌর ২৩-০১-২০২১ ০৫:৩৯ অপরাহ্ন প্রকাশিত হয়েছে
এবং 457 বার দেখা হয়েছে।

পাঠকের ফেসবুক মন্তব্যঃ
Loading...
  • সর্বাধিক পঠিত
  • সর্বশেষ প্রকাশিত

  

  ঠিকানা :   অনামিকা কনকর্ড টাওয়ার, বেগম রোকেয়া স্মরনী, তৃতীয় তলা, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা- ১২১৬
  মোবাইল :   ০১৭৭৯-১১৭৭৪৪
  ইমেল :   info@sirajganjkantho.com