রসুন আবাদে ব্যস্ত চলনবিলে চাষীরা
আশরাফুল ইসলাম রনি: শস্য ভান্ডারখ্যাত দেশের বৃহত্তর চলনবিলের পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে রসুনের আবাদ। বর্তমানে রসুনের বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চলনবিলের নারী-পুরুষ, কিশোর ও কিশোরীসহ কৃষকরা।
সাধারণত বিলের পানি কার্তিকের শেষে নদীতে নেমে যায়। অগ্রহায়নের শুরুতে বিলের পলিমাটি শুকিয়ে ওঠে। তখন কৃষক কোন রকম হালচাষ ছাড়াই রসুন রোপণ করেন।
এ বছর সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় প্রায় ৪৪০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হওয়ার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হালচাষ ছাড়া ২০ হেক্টর জমিতে রসুন লাগানো হয়েছে। তাছাড়া বীজ রোপণের মাধ্যমে ৪০০ হেক্টর লাগানো হচ্ছে।
অপরদিকে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, নাটোরের গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রসুন আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে।
জানা গেছে, এ বছর চলনবিলের এসব উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিগুলোতে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে। এখন আমন কাটা শেষে বিনাচাষে রসুন রোপণের ধুম পড়েছে এ এলাকাগুলোতে। এ সকল উপজেলায় বিনাচাষে রসুনের বাম্পার ফলন হয়। এ কারণে প্রতি মৌসুমে এলাকার কৃষকরা বিনাচাষে রসুনের রোপণ করতে শুরু করেছেন।
তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দেখা গেছে, চলনবিলের পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে রসুন চাষে কৃষকের মাঝে চলছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। চলনবিলে এখন চলছে রসুন রোপণের ভরা মৌসুম। চোখ মেললেই দেখা যায়, নারী-পুরুষ ও পাশাপাশি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা মিলে বিরের জমিতে লাইন ধরে বসে বসে রসুনের কোয়া রোপণ করছেন।
তাড়াশের নওগাঁ ইউনিয়নের মহিষলুটি গ্রামের কৃষক আব্বাস আলী জানান, প্রতিবছরের মত এবারো তিন বিঘা জমিতে রসুন লাগিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে বিনাচাষে তিন বিঘা জমিতে রসুন লাগানো হয়েছে।
উপজেলার নাদোসৈয়দপু গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম জানান, এবারো কার্তিক মাসের শেষে বিল থেকে পানি নেমে গেলে পলি জমা কাঁদা-মাটিতে বিনা হালে সারিবদ্ধভাবে রসুনের কোয়া রোপণ করা হয়।
এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার লুনা জানান, বিনাচাষে রসুন আবাদে লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর উপজেলায় রসুন আবাদটা বাড়ছেই।
বিনাহালে উৎপাদন পদ্ধতি হলো- কার্তিক মাসের শেষে বিল থেকে পানি নেমে গেলে পলি জমা কাঁদামাটিতে বিনাহালে সারিবদ্ধভাবে রসুনের কোয়া রোপণ করা হয়। রোপণ শেষে ধানের নাড়া (খড়) বিছিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে জমিতে প্রতি বিঘা ২৫/৩০ কেজি টিএসপি, ২৫ কেজি পটাশ, ২০ কেজি জিপশাম ও দুই কেজি বোরন সার প্রয়োগ করা হয়। রোপণের ২৫/৩০ দিন পর বিঘা প্রতি ১৫/২০ কেজি ইউরিয়া সার দিয়ে পানি সেচ দেওয়া হয়। ৫০ দিন পর আবার দ্বিতীয় দফা ১২/১৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। রোপণের ৯৫/১০০ দিন পর ফাল্গুন মাসের ১৫ তারিখ থেকে চৈত্র মাস পুরো চলে রসুন উত্তোলনের কাজ। রসুন মাঠ থেকে তুলে এনে উঠোনে বা খোলায় চড়া রোদে শুকানো হয়। এরপর কৃষক রসুন গাছ সমেত ঝুটি বা বিয়েনী বেঁধে ঘরে সংরক্ষণ করেন।